সিএস নকশা অনুযায়ী নদীর সীমানা নির্ধারণের নির্দেশ আদালতের
জহুরুল ইসলাম,শাহজাদপুর ( সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি : নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। নদীর সাথে এদেশের মানুষের চরম মিতালি। আবার এই মানুষই সম্পদের মোহে হত্যা করছে নদীকে।শাহজাদপুর উপজেলার বুক চিরে বয়ে গেছে কয়েকটি নদী। এর মধ্যে অন্যতম নদী হিসেবে পরিচিত বড়াল। এই নদীমুখেই অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম বাঘাবাড়ি নৌবন্দর। এই বন্দর উত্তরবঙ্গের সবকটি জেলার অর্থনীতির বিরাট চালিকা শক্তি। সেইসাথে নদীটি এ অঞ্চলের কৃষিতেও রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বড়াল শাহজাদপুরের মানুষ সহ সমস্ত প্রাণিকুলের ভিতর প্রাণ সঞ্চার করে। অথচ নদীটি দখল ও দূষণের কবলে যৌবন হারাতে বসেছে। নদীর উপর বিরাট বিরাট স্থাপনাসহ গড়ে উঠছে বাড়ি ঘড়। নদীর তীরে বিরাট অংশ জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় বালি ফেলে ভরাট করে দখল উৎসবে মেতেছে কিছু বিকৃত মানুষ।
এভাবে চোখের সামনে দখল হয়ে যাওয়া বড়ালের দিকে তাকালে বড় মায়া হয়। নদীর দিকে তাকালে এখন মনে হয় আস্তে আস্তে বৃদ্ধ মানুষের রক্ত নালির মতো সরু হয়ে যাচ্ছে নদীটি । এক সময়ের বিরাট প্রস্থের উত্তাল নদী এখন মানুষের বিকৃত দখল উৎসবে মরতে বসেছে। অথচ এই নদীটি এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনীতির বড় নিয়ামক। কিন্তু কেবলমাত্র গুটিকয়েক মানুষের বিকৃত লোভের ফলে আস্তে আস্তে মরতে বসেছে উত্তরাঞ্চলের পরম বন্ধু বড়াল নদী। এর ফলে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম নদী বন্দর এখন হুমকির সম্মুখিন। খুব দ্রুত নদী রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ না নিলে বড় ধরনের ক্ষতির সন্মুখিন হবে শাহজাদপুর সহ উত্তরবঙ্গের ১৬ টি জেলার লক্ষ লক্ষ মানুষ।
এদিকে সম্পূর্ণ বড়াল নদীর উপর সবচেয়ে বড় যে স্থাপনাটি গড়ে উঠেছে তার নাম দেশবন্ধু সিমেন্ট মিলস্ লিঃ। শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ি এলাকায় বড়াল নদীর উপর দীর্ঘ সেতু। সেতুর উপর দাড়িয়ে পূর্ব দিকে তাকালেই চোখে পরবে বিশাল এক স্থাপনা। দূর থেকে জাহাজের মত দেখতে মনে হলেও আসলে এটি সিমেন্ট কারখানা। বড়াল নদীর ৯.৭২ একর জমিতে স্থাপিত দেশবন্ধু গ্রুপের কারখানাটি। সিরাজগঞ্জ-পাবনা মহাসড়কের বড়াল সেতু পার হয়ে বাঘাবাড়ি দক্ষিণ বাসস্ট্যান্ড। এখান থেকে নদী ঘেষে পূর্ব দিকে চলে গেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত একটি পাকা রাস্তা। এ রাস্তা ধরে সামান্য এগুলেই হাতের বাম পাশে দেশবন্ধু সিমেন্ট কারখানা। সম্পূর্ণ কারখানাটি নদীর উপর হওয়ায় বিপরীত তীর থেকে কারখানাটিকে দেখলে ভাসমান জাহাজের মতই মনে হয়। নদীর উপর ২.৯০ একর মূল কারখানাতো রয়েছেই উপরন্তু কারখানার জায়গা বাড়াতে আরও ৬.৮২ একর জমিতে মাটি ভরাট করে স্থায়ী সীমানা দেওয়াল নির্মাণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এই ভরাটের ফলে নদীর পানি প্রবাহের স্বাভাবিক ধারা যেমন ব্যহত হচ্ছে সেই সাথে নদী সরু হয়ে যাওয়ায় বন্দরে আসা যাওয়া জাহাজের চলাচলে হচ্ছে অসুবিধা। দখল হয়ে যাওয়া এ সমস্ত জায়গা দ্রুত উদ্ধার না করলে বন্দরের কার্যকারিতা হুমকির মুখে পরে যাবে এমনটাই আশংকা কর্তৃপক্ষের।
শাহজাদপুর ভূমি অফিসের তথ্য অনুযায়ী সিএস রেকর্ডে যা নদী ছিল, এস এ রেকর্ডের সময়ই তা তিন খন্ডে বিভক্ত হয়। একটি অংশ নদী, সামান্য অংশ বালুচর এবং কিছু অংশ ব্যক্তি মালিকানায় চলে যায়। এস এ রেকর্ডে ব্যক্তি মালিকানার অংশটুকু আর এস রেকর্ডে আবার কিছু অংশ অবদায় চলে যায় এবং কিছু অংশ ব্যক্তি মালিকানায়ই থেকে যায়। সর্বশেষ ভূমি জরিপে যা ব্যক্তি মালিকানা হিসেবে রেকর্ড হয়েছে তা সংশোধনের জন্য দেওয়ানি আদালতে একটি মামলা হয়। কিন্তু মামলার তোয়াক্কা না করেই প্রভাব খাটিয়ে বহাল তবিয়তে দেশবন্ধুর কার্যক্রম। এদিকে ২০১৬ সালে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মোঃ আতাহারুল ইসলাম বড়াল নদী পরিদর্শনে আসেন। পরিদর্শন শেষে বিভিন্ন বিষয়ে রিপোর্ট প্রদান করেন। রিপোর্টে কারখানাটি যে সম্পূর্ণ নদীর উপর তা উল্লেখ করাসহ অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ ও নদীর সীমানা নির্ধারণের জন্য অনুরোধ করা হয়। একই সাথে বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিশনের পক্ষ থেকে একটি মামলাও করা হয় দেশবন্ধু সিমেন্ট কারখানার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি মহামান্য আদালত সিএস নকশা অনুযায়ী নদীর প্রবাহ রক্ষার জন্য অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানিয়েছেন, নদীর জমি দখল করে কারখানা গড়ে উঠায় মামলা দায়ের হয়েছিল। আদালত সিএস নকশা অনুযায়ী নদীর প্রবাহ নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করে নদীর সীমানা নির্ধারনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দিয়েছেন। নদী রক্ষা কমিশনের নিকট সার্বেয়ার নিয়োগের আবেদন করা হয়েছে। নিয়োগ হলেই কার্যক্রম শুরু হবে।