কালিয়া উপজেলার চাচুড়ী ইউনিয়নের নগদ টাকার তালিকা যাচাই করে দেখা গেছে ১ হাজার ১’শ ৩০ জনের মধ্যে অন্তত ৩’শজন ধনবান মানুষ সরকারি নগদ সহায়তা পেয়েছেন। তালিকায় শ্রমিক উল্লেখ করা এসব মানুষের মধ্যে রয়েছেন চাচুড়ী গ্রামের মো.জনি মোল্যা যার দুটি মাছের ঘের রয়েছে, চাচুড়ী বাজারে রয়েছে মোবাইল শো-রুম। কৃষ্ণপুর গ্রামের দুটো বড় বাড়ি,৬ একর জমির চিংড়িঘের আর বাজারে বড় ইলেকট্রনিক্স শো-রুমের মালিক আহাদ মোল্যা তিনিও দিনমজুর সেজে নিয়েছেন সরকারি ২৫’শ টাকা।
আজিজুর মেম্বর, সৈয়দ মারফত আলী, চাচুড়ী বাজারের চিংড়ি মাছের আড়তদার মদন মোহন বিশ্বাস এর মতো কোটি টাকার কারবারীর নাম রয়েছে এই তালিকায়। সরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা জুনায়েদ আল হাবীব এর মোবাইল নম্বরে তার ভাগ্নে রসিমুল হকের নামও দেয়া হয়েছে। একই মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন চেয়ারম্যানের ভাই তরিকুল ইসলাম। আবার তালিকায় নাম না থাকলেও নগদ সহায়তা পেয়েছেন আরেক ঘের মালিক তৌরুত মোল্যা, যিনি চাচুড়ীর ১নং ওয়ার্ড মেম্বর।
ইউনিয়নের সাইনবোর্ডে ফেরারী আসামির তালিকায় বড় করে লেখা আছে ৫ বছর ধরে ভারতে পলাতক আসামি আলী হোসেনের নাম। সে নামও আছে সরকারি নগদ সহায়তার ১৬৪ নম্বরে।
চাচুড়ী ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড মেম্বর তৌরুত মেম্বর ভিন্নবার্তা ডটকমকে বলেন, আমি গত রোজার ঈদেদর আগেই আড়াই হাজার টাকা পেয়েছি, কিভাবে আমার নম্বরে এই টাকা আসলো জানি না, টাকা পেয়েই চাচুড়ী বাজারের সবাইকে খাইয়ে দিয়েছি।
তালিকার ২ নম্বরে থাকা ঘের ও শো-রূম ব্যবসায়ী মোঃ জনি মোল্যা বলেন, আমরা যোগ্য বলেই তো আবেদন করেছি, সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে বলেন, আমরা জানতাম এটা করোনাকালীন সময়ে সবার জন্য তাই আবেদন করেছি।
তালিকার ১৮৫ নম্বরে থাকা কোটিপতি আহাদ মোল্যা বলেন, আমাদের দোকান-পাট বন্ধ, ব্যবসা মন্দা তাই টাকা চেয়ে নাম দিয়েছি, তবে টাকা এখনও পাইনি।
১৮৯ নম্বরের তালিকায় থাকা মদন মোহন বিশ্বাস বলেন, সরকারি টাকা পাইছি একমাস আগে, চেয়ারম্যান আর তার ভাই আমার নাম দিছে, এতে আমার কি বলার আছে।
প্রায় ২৫ হাজার লোকের বসতি ইউনিয়নে অন্তত ৩ হাজার হতদরিদ্র মানুষের বাস। যাদের জন্যই সরকারি এই নগদ সহায়তা। এই তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন ডহর চাচুড়ী গ্রামের ঋষি সম্প্রদায় ও জেলে পাড়া। কৃষ্ণপুর গ্রামের বাদ্যকার পাড়া আর হাড়িয়ারঘোপ জেলাপাড়ার কয়েকহাজার মানুষ। করোনায় কর্মহীন এসব অসহায় মানুষের খবরই রাখেননি ইউপি চেয়ারম্যান কিম্বা তালিকা তৈরিতে ব্যস্ত প্রশাসনের লোকেরা।
ডহরচাচুড়ী গ্রামের ঋষি সম্প্রদায়ের শিমুল বিশ্বাস বলেন সরকার নাকি গরীব মানুষের জন্য কত ব্যবস্থা নিছে, কই আমাদের তো কেউ কিছু দেয় না। মিষ্টি দোকানের কর্মচারী রূপক বিশ্বাস বলেন, কাজ না করে বসে আছি কয়েকমাস। শুনেছি সরকার নগদ টাকাও দেচ্ছে, আমাদের নাম কে দেবে?
কৃষ্ণপুর গ্রামের সেলাই কারিগর আলাউদ্দিন মোল্যা বলেন, বাজারে সব বড়লোকেরাই সরকারি নগদ টাকা পাচ্ছে। আমরা না খেয়ে থাকলেও ভাগ্যে সরকারি টাকা কোনদিনই জুটবে না।
তালিকায় কোটিপতি, সরকারি কর্মকর্তাদের নাম দেওয়ার ব্যাপারে চাচুড়ী ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, ইউএনও’র তাড়াহুড়োতে দ্রুত তালিকা তৈরি করতে গিয়ে কিছু ভুল লোকের নাম ঢুকতে পারে, বাকি সব ঠিক আছে।
কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.নাজমুল হুদা বলেন, গরীব মানুষের টাকা যদি বড়লোকেরা পেয়ে থাকে তাহলে তা ব্লক করা যেতে পারে অথবা তাদের বিরুদ্ধে সরকারি টাকা নষ্ট করার অপরাধে ব্যবস্থা নিয়ে টাকা ফেরত নেয়া যেতে পারে। সরকারি নগদ সহায়তা প্রকৃত অসহায় দিন মজুরের কাছে না গিয়ে চেয়ারম্যানের কারসাজিতে কোটিপতি মজুরদের কাছে যাওয়ায় হতাশ হয়েছে এলাকার সাধারণ মানুষ।